পেজ ভিজিট: ২৩,৫৮,৮৭৫ | অনলাইন: ৫
English
বিভাগ অনুসারে দেখুন

দুই থেকে পাঁচ দিনে ফরিদপুর এবং রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ


জেলার ভিডিও দেখুন
Card image cap

কল্যাণ দীঘি

Card image cap

কুঠি পাচুরিয়া বাবুর বাড়ি

Card image cap

দুই থেকে পাঁচ দিনে ফরিদপুর এবং রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ

Card image cap

বিনয় ভূষন সাহার বাড়ি

Card image cap

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র

Card image cap

নলিয়া জোড় বাংলা মন্দিরঃ

Card image cap

দুই থেকে চার দিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ

Card image cap

একদিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ



 রাজবাড়ী জেলা রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।  বর্তমান রাজবাড়ী জেলা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮১১ সালে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এছাড়াও রাজবাড়ী জেলার বর্তমান উপজেলাগুলো অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৩ সালে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি থানাকে মান উন্নীত থানায় রূপান্তরিত করলে রাজবাড়ীকে মান উন্নীত থানা ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ই জুলাই থেকে সরকার অধ্যাদেশ জারী করে সকল মান উন্নীত থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করার ফলে রাজবাড়ী উপজেলা হয়। গোয়ালন্দ মহকুমার প্রশাসনিক দপ্তর রাজবাড়ীতে থাকায় অবশেষে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ সকল মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে থেকে রাজবাড়ী জেলায় রূপান্তরিত হয়। জনশ্রুতি আছে,রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ হয়। রাজা সূর্য কুমারের পিতামহ প্রভুরাম নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মচারী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীর যুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এসে আত্মগোপন করেন। পরে তার পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়ে তোলেন। তারই পুত্র রাজা সুর্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ করা হয় ১৮৯০ সালে। বিভিন্ন তথ্য হতে জানা যায় যে, রাজবাড়ী রেল স্টেশন এর নামকরণ রাজা সূর্য কুমারের নামানুসারে করার দাবি তোলা হলে বানিবহের জমিদারগণ প্রবল আপত্তি তোলেন। উল্লেখ্য, বর্তমানে যে স্থানটিতে রাজবাড়ী রেল স্টেশন অবস্থিত উক্ত জমির মালিকানা ছিল বানিবহের জমিদারগণের। তাদের প্রতিবাদের কারণেই স্টেশনের নাম রাজবাড়ীই থেকে যায়। এ সকল বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হয় যে, রাজবাড়ী নামটি বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। এলাকার নাওয়ারা প্রধান, জমিদার, প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিগণ রাজা বলে অভিহিত হতেন। তবে রাজা সূর্য কুমার ও তার পূর্ব পুরুষগণের লক্ষীকোলের বাড়ীটি লোকমুখে রাজার বাড়ি বলে সমধিক পরিচিত ছিল। এভাবেই আজকের রাজবাড়ী। এই জেলায় রয়েছে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। 


ভোরে আলো ফোঁটার সাথে সাথেই রওনা দিবেন। প্রথমেই ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে চড়ে চলে যেতে হবে পাটুরিয়া ঘাটে। পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে যাওয়ার জন্য লঞ্চ ও স্পিড বোট পাবেন। সময় বাঁচাতে স্পিড বোটে উঠে পড়ুন।দৌলতদিয়া ঘাটে নেমে সিএনজি/অটোরিক্সা নিয়ে ঢাকা-ফরিদপুর মহাসড়ক ধরে চলে আসুন রাজবাড়ি সদর উপজেলার পাঁচুরিয়ার অন্তর্গত মুকুন্দিয়া গ্রামে অবস্থিত কুঠি পাচুরিয়া বাবুর বাড়িতে। বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি মঠ। প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন দ্বারকা নাথ সাহা চৌধুরী। রাজা সূর্যকুমার ও জমিদার দ্বারকানাথ সাহার প্রজা হিতৈষী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে এ জেলায়। পাবলিক লাইব্রেরি,পল্লী চিকিৎসা ও শিক্ষা বিস্তারে দ্বারকা নাথ সাহার অবদান চিরস্মরণীয়। ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে জন্ম নেয়া দ্বারকা নাথ সাহা এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। পাশের মঠটিতে কে সমাহিত আছেন সে ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় নি। এখান  থেকে ভ্যান/অটোরিকশাযোগে যেতে হবে দেড় কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত ডিএন সাহা স্মৃতি মন্দির।এই মন্দির কমপ্লেক্সটি রাজবাড়ী জেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়া গ্রামে অবস্থিত।  দারকা নাথ সাহা চৌধুরী ছিলেন এই এলাকার প্রভাবশালী জমিদার।  তাঁর পুত্র শ্রী সরোজেন্দ্রো নাথ সাহা তাঁর বাবার স্মরণে ১৩২৩ বঙ্গাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।মন্দিরটি ‘পঞ্চ রত্ন’ (পাঁচটি রত্ন) রীতিতে নির্মির।পরবর্তীতে তাঁর স্মৃতিসৌধ মন্দিরের পাশে ডিএন সাহার স্ত্রীর স্মরণে আরও একটি ছোট ‘এক রত্না’ বা এক মণি ধরণের মন্দির নির্মিত হয়েছিল।যা কিছুদিন পূর্বে ধ্বসে পড়েছে।এই দম্পতির পুত্র সরোজেন্দ্রো গর্বের সাথে তাঁর বাবা-মায়ের অনন্ত প্রেমকে দুর্দান্ত দ্বৈত মন্দিরের মাধ্যমে সংরক্ষণ করেছিলেন।অসাধারণ এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই দর্শনার্থীরা আসেন। মন্দিরটি দেখা শেষে পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে চলে যেতে হবে আড়াই কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত বিনয় ভূষন সাহার বাড়ি। ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়িটি রাজবাড়ী জেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খানখানাপুরে অবস্থিত।অসাধারণ নির্মাণশৈলীর এই বাড়িটির নির্মাণ সাল বা নির্মাতা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাই নি। বাড়িটিতে এখনো একটি পরিবার বসবাস করেন। উনারা নিজেদের জনিদারের বংশধর বলে দাবি করেন। এবার আবার ছোটো খাটো একটা ভ্রমন। অটোরিকশা /বাসযোগে ঢাকা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক ধরে চলে যেতে হবে রাজবাড়ি শহরে অবস্থিত রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। গোয়ালন্দ মহকুমার বাণীবহের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদারের কাঁচারী ঘরটিতে তিনি ১৮৯২ সালে গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানটিই আজকের রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এই বিদ্যালয়ের নাম ছিলো 'দি গোয়ালন্দ ইংলিশ হাই স্কুল'। নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল।প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন স্কুল ভবনটি (লাল ভবন) বর্তমানে ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইতিহাস বিবেচনায় এই ভবনকে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহাসিক। নান্দনিক এই ভবনটি দেখা হলে এবার চলে যাবেন প্রশান্তির খোঁজে নদীর পাড়ে। স্কুল থেকে ৩ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত পদ্মার পাড় যার স্থানীয় নাম গোদার বাজার ঘাট। 

১৯৮৪ সালে জেলা হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া পদ্মা নদী বিধৌত রাজবাড়ী জেলার মানুষের কাছে একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র/দর্শনীয় স্থান হলো এই গোদার বাজার ঘাট।যেকোনো উৎসব কিংবা ছুটির দিনে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভীড় করে রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুনচী এলাকার পদ্মা নদীর পাড় তথা গোদার বাজার ঘাটে। 

দৃষ্টিনন্দন এ স্থানটিতে কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসন হতে দর্শনার্থীদের বসার জন্য টাইলস করে কিছু বেঞ্চ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।চাইলেই নৌকা ও স্পিড নিয়ে নদীতে ভ্রমণ করতে পারবেন।যেতে পারবেন ঘাটে কাছেই জেগে ওঠা নতুন চরে। নদীর মিষ্টি বাতাস খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়ুন। চলে আসুন শহরে। এখান থেকে বাস/টেম্পু চড়ে ঢাকা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের কালুখালী বাজারে চলে যেতে হবে। কালুখালী বাজার থেকে ভ্যান নিয়ে যেতে হবে মালিয়াট মীম মসজিদ।  রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদের নামফলক অনুযায়ী,১৩৬০ সালে স্থাপিত এই মসজিদটি নির্মান করেন মোঃ সিরাজ মন্ডল এবং তনু কবিরাজ। একগম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটির একতলা ভবনটিতে সম্প্রতি সংস্কার ও রঙের কাজ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,দূর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে। এবার এখান থেকে অটোরিকশা নিয়ে বোয়ালিয়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে রসুলপুর - বালিয়াকান্দি সড়ক ধরে ১৩ কিমি গেলে পৌঁছে যাবেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে অবস্থিত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম বাঙ্গালী সাহিত্যিক, কালজ্বয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিস্থলকে ঘিরে রাজবাড়ীর এই স্থানটিতে  গড়ে তোলা হয়েছে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র।১৮৪৭ সালের ১৩ ই নভেম্বর কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পদমদী গ্রামে বসেই তিনি রচনা করেছেন কালজয়ী সব গ্রন্থ। গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ, নাটক এবং উপন্যাস মিলিয়ে তিনি লিখেছেন মোট ৩৭ টি বই।তিনি 'বিষাদ-সিন্ধু' মহাকাব্যের জন্য বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীর নিজ গৃহে মীর মশারফ হোসেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে তার স্ত্রী কুলসুমের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়।মীর মশারফ হোসেনের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় দুই  একর জায়গাজুড়ে লেখকের নিজ গ্রাম পদমদীতে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র।লেখকের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন।এছাড়াও সারা বছর দর্শনার্থীরা এখানে আসেন লেখকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে।সরকারী ছুটির দিন এই স্মৃতিকেন্দ্রটি বন্ধ থাকে। আমাদের এবারের গন্তব্য বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রাম। অটোরিকশা নিয়ে যেতে যেতে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লাগবে। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামে জোড় বাংলা মন্দিরের অবস্থান।পাশাপাশি দুইটি মন্দির থাকায় এমন নামকরণ হয়েছে বলে মনে করা হয়।বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা দু'টি মন্দিরের একটির চূড়া খসে পড়েছে।রাজা সীতারাম রায় ১৬৫৫ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।মন্দিরটি উড়িষ্যার গৌড়ীয় রীতিতে নির্মাণ করা হয়েছিলো বলে জানা যায়।পরবর্তীতে শ্রী কৃষ্ণ রাম চক্রবর্তী রাজা সীতারাম রায়ের অনুরোধে নলিয়া গ্রামে এসে দেব মন্দির এবং বিগ্রহ রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মন্দির থেকে  ৬৫০ মিটার দুরত্বে একই গ্রামে অবস্থিত হরি ঠাকুর বাড়ি।  বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি মন্দির। বাড়িটির বিস্তারিত ইতিহাস জানা যায় নি। এখানেই শেষ হবে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমন। পরিবহন ব্যাবস্থা যেহেতু এখানে তেমন উন্নত না তাই একস্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। এজন্য সময়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উত্তম।


এখান থেকে আমরা চলে যাচ্ছি ফরিদপুর জেলায় ।

 ফরিদপুর জেলার প্রতিষ্ঠা ১৭৮৬ সালে। প্রথমেই চলে যাই ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নে অবস্থিত  পাতরাইল মসজিদে। দৃষ্টিনন্দন চমৎকার কারুকার্য খচিত ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি ১০ গম্বুজ বিশিষ্ট।  মসজিদটির নির্মাণ কাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি। ধারণা করা হয় আনুমানিক ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের শাসনামলে বিখ্যাত সুফি দরবেশ মজলিশ আবদুল্লাহ খান আউলিয়া এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেন। আর তাঁর নামানুসারেই এটি মজলিশ আউলিয়া মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।


 নতুন আরেকটা সিএনজি রিজার্ভ করে ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক হয়ে ফরিদপুর জেলা শহরে চলে এলাম। জেলা শহর হয়ে চলে গেলাম জেলার সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের বাড়িতে।বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদী। বাড়িতে রয়েছে মোট চারটি পুরাতন টিনের চালা ঘর। কবির নিজের হাতে লেখা পান্ডুলিপি সহ ঘরগুলোতে সংরক্ষিত রয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র। বাড়ির সামনেই রয়েছে উন্মুক্ত জসীম উদ্যান,যেখানে দর্শনার্থীদের বসার ব্যাবস্থা রয়েছে।১৯০৩ সালে সদর উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্ম নেয়া কবি মৃত্যবরণ করেন ১৯৭৬ সালে। বাড়ির উত্তরে কুমার নদীর তীরে ডালিম গাছের তলে সমাহিত আছেন। টিকেট কেটে বাড়িতে প্রবেশ করে হারিয়ে গেলাম সেই সোনালী অতীতে।


সেখান থেকে বের হয়ে ১০ মিনিটে চলে গেলাম ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অম্বিকাচরণ মজুমদার এর বাড়ি কুসুম কুটিরে। ১৮৫১ সালে তৎকালীন ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করা এই মহান ব্যাক্তিত্ব একটানা বিশ বছর ফরিদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।১৯১৩ সাল থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর সভাপতি ছিলেন।


 চমৎকার এই বাড়িটি দেখে পাঁচ মিনিটে চলে গেলাম ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত জমিদার বাড়ি ময়েজ মঞ্জিলে। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার খান সাহেব ময়েজউদ্দিন বিশ্বাস । বর্তমানে ২৭ বিঘা জমির উপর স্থাপিত এই বাড়িতে চারটি ভবন ও একটি মসজিদ রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা চৌধুরী আব্দুল্লাহ জহিরুদ্দিন (লাল মিয়া), ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়া ও এনায়েত হোসেন চৌধুরী তারা মিয়া এই বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্যার মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, মহাত্মা গান্ধীসহ ১৯৫০-৬০ এর দশকের গুরুত্বপূর্ণ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই জমিদারবাড়িতে এসেছিলেন।


 ঐতিহাসিক ও নান্দনিক এই জমিদার বাড়ি দেখা শেষে মুজিব সড়ক ধরে ১০ মিনিটেই আমরা চলে যাই জেলার মানুষের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ ধলার মোড়ে। ফরিদপুর শহরকে প্রমত্তা পদ্মার কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষা পদ্মার পাড়ে দেয়া হয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।শহরেরর পাশে এরকম একটি বাঁধের নাম ধলার মোড়। বর্তমানে শহরের মানুষের অন্যতম বিনােদন স্পটে পরিনত হওয়া ধলার মোড়ে বসে আপনি উপভোগ করতে পারবেন পদ্মার মোহনীয় সৌন্দর্য।চাইলে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারবেন পদ্মার বুকে। জেগে ওঠা চরে অনেকসময় দেখা মিলে মেছোবাঘের।অনেকে ঘুরতে এসে নদীর পানিতে সাতার কাটে ও গোসল করে।সন্ধ্যায় স্থানটি মোহনীয় রূপ ধারণ করে। আমাদের হাতে সময় না থাকায় নৌকায় চড়া হয় নি,গোসলও করা হয় নি। তবে মিষ্টি বাতাস ক্লান্ত শরীরকে প্রাণবন্ত করে দিয়েছে।


 কিছুক্ষণ সেখানে থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা সড়ক ধরে এবার রওনা দিলাম জেলার কানাইপুরে অবস্থিত কানাইপুর জমিদার বাড়িতে (স্থানীয় নামঃশিকদার বাড়ি)।  প্রায়  ৪০০ বছর আগে নির্মিত বাড়িটি রাণী ভবতারিনী শিকদারের আমলে নির্মাণ করা হয়েছে বলে কথিত আছে।জানা যায়,এই জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধেই ১৮১৮ সালে ফরিদপুরে ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল যার নেতৃত্বদান করেছিলেন হাজী শরিয়তুল্লাহ এবং পরবর্তিতে তার পুত্র দুদু মিয়া। 


ঐতিহাসিক এই বাড়ি দেখা শেষে আমাদের এবারের গন্তব্য জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামে অবস্থিত সুলতানী আমলে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত নয় গম্বুজ বিশিষ্ট সাতৈর শাহী জামে মসজিদ।শিকদার বাড়ি থেকে মাঝকান্দি বাসস্ট্যান্ড হয়ে ২০মিনিটে পৌঁছে গেলাম ঐতিহাসিক এই মসজিদে। বাইরের অংশে টাইলস করা হলেও ভেতরে অসাধারণ কারুকাজ চোখ জুড়ানো। শের শাহের আমলে সাতৈর গ্রামের আউলিয়া হযরত শাহ সুফি শায়েফ ছতুরি (রাঃ) এর সম্মানে আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। 


আমাদের সর্বশেষ লোকেশনে যেতে হবে এবার। মোটামুটি ৪০ মিনিটের ভ্রমণ শেষে মাঝকান্দি বাজার হয়ে ফরিদপুর - মাগুরা মহাসড়ক ধরে পৌঁছে গেলাম জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নে অবস্থিত ফরিদপুর-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে চন্দনা নদীর পূর্ব পাশে অবস্থিত বারো কোণ বিশিষ্ট কারুকার্য খচিত মাথুরাপুর দেউলে। চুন-সুরকির মিশ্রণে নির্মিত ২১.২ মিটার উঁচু এই  দেউলটির সম্পূর্ণ স্থাপনা জুড়ে টেরাকোটার দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য রয়েছে।বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত এই দেউলটি ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের গভর্ণর সংগ্রাম সিংহ নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। এখানেই  ফরিদপুর ভ্রমণের পরিসমাপ্তি। চাইলে মধুখালী থেকেই পেয়ে যাবেন ঢাকা ফেরার বাস। 

 

বিজ্ঞাপন - অনলি টুটুল

Like My Facebook

সর্বশেষ

ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক

বগুড়া ,রাজশাহী

22 Aug 2023 | ভিডিও দেখুন

বাঘা মসজিদ

রাজশাহী ,রাজশাহী

03 Jul 2023

খেরুয়া মসজিদ

বগুড়া ,রাজশাহী

01 Jul 2023

শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম

বগুড়া ,রাজশাহী

29 May 2023

যমুনা বহুমুখী সেতু

সিরাজগঞ্জ ,রাজশাহী

09 Jan 2023

পরীর দালান

টাঙ্গাইল ,ঢাকা

05 Jan 2023 | ভিডিও দেখুন

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা

নেত্রকোণা ,ময়মনসিংহ

10 Nov 2022

জিরো পয়েন্ট, নেত্রকোনা

নেত্রকোণা ,ময়মনসিংহ

10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন

একদিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ

রাজবাড়ী ,ঢাকা

10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন

দুই থেকে চার দিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ

রাজবাড়ী ,ঢাকা

10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন

Creating Document, Do not close this window...