ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেট থেকে বাসে করে আসা যায় গোপালগঞ্জ। গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। তবে ভ্রমন প্ল্যানের সুবিধার্থে আমরা প্রথমে ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে গোপালগঞ্জ এর কাশিয়ানী উপজেলায় যাবো।
আমাদের প্রথম গন্তব্য গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার ওড়াকান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি। শ্রী শ্রী হারিচাঁদ ঠাকুরের লীলাক্ষেত্র এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের মহাতীর্থ হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি পবিত্র স্থান। প্রায় দুইশত বছর আগে ১২১৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে ওড়াকান্দির পার্শ্ববর্তী সাফলিডাঙ্গা গ্রামে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন।
এই গ্রামেরই ভীষ্ণদেব দাস নিম্নবর্ণের প্রতিনিধি হিসাবে প্রথম বাংলার আইন পরিষদে প্রবেশ করেন।
কাশিয়ানী থেকে ওড়াকান্দি-সাতপুর সড়ক ধরে ১৪ কিমি দুরত্বে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক উজানী রাজবাড়ী এটি। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটি সংস্কারের অভাবে ক্রমেই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জমিদার গোবিন্দ নারায়ণ ও সুর নারায়ণ গোপালগঞ্জের উজানী গ্রামে বসতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে অসাধারণ কারুকার্য খচিত এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময়ে উজানী জমিদারের মোট সাতটি জমিদারী ছিল। প্রাসাদ ছাড়াও উজানী রাজবাড়ীতে আরও আছে বৈঠকখানা, পুকুরের ঘাট, মঠ ও মন্দির। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে জমিদার ও তাদের উত্তরসূরিরা ভারতে চলে গেলেও সুর নারায়ণের বংশধররা এখনো এই উজানী জমিদার বাড়ীতে বসবাস করছেন।
উজানী জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে জেলার ঐতিহ্যবাহি চান্দার বিল। ১০হাজার ৮৯০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত চান্দার বিল জীব বৈচিত্র্যে ভরা এক বিশাল জলাভূমি । এর পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধূমতি বিলরূট ক্যানেল। গোপালগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী চান্দার বিল আজ থেকে প্রায় ৪হাজার বছর আগে উচু বন ভূমি ছিল বলে জানা যায় । এখানে তখন জনবসতি ছিল না ছিল বন্যপশুর অবাধ বিচরন । ভূমিকম্পের ফলে ঐসব বনভূমি দেবে গিয়ে বিশাল জলাভূমিতে পরিনত হয় । এখানে এক সময় এত বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক মাছ ছিল যে চান্দার বিল বৃহওর ফরিদপুর জেলার মাছের অভয়ারন্য হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
আমাদের এবারের গন্তব্য মুকসুদপুর উপজেলা থেকে পূর্ব দিকে মুকসুদপুর টেকেরহাট মহাসড়ক হয়ে ৭কিঃমিঃ দূরে মহারাজপুর ইউনিয়নের বনগ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক ভূঁইয়া বাড়ি। এটি মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। কার দ্বারা এবং কবে নাগাদ এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির সূচনা হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে এই বাড়িতে এখন যে পরিবারটি বসবাস করে তারা নিজেদেরকে জমিদারের বংশধর দাবি করেন। তাদের মতে, গোবিন্দ ভূঁইয়া ছিলেন এই বাড়ির শেষ জমিদার। তিনি মারা যাওয়ার পর তার বংশধর হিসেবে দাবি করা পরিবারটি এখানে বাস করে। এখানে অনেক সুউচ্চ প্রাচীন ভবন এবং দূর্গা মন্দির রয়েছে। এই জমিদার বাড়িটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদী।
এবারের গন্তব্যটিকে ঢাকার সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ সড়ক ধরে প্রায় পৌনে একঘন্টা ভ্রমন করে সোজা পৌঁছে যাবেন ঐতিহাসিক উলপুর গ্রামে অবস্থিত উল্পুর জমিদার বাড়ি। জমিদার প্রীতীশচন্দ্র রায় চৌধুরী প্রায় ২০০ একর জায়গা জুড়ে উলপুর জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে জমিদারের উত্তরসূরি মিলনকান্তি রায় চৌধুরী জমিদার বাড়ির আদলে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করেন। এর মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর ভবনটি বৃদ্ধাশ্রম হিসেবে ব্যাবহৃত হবে, যার কাজ ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া সুইমিংপুল, নিজের বাস ভবন , দূর্গা মন্দির এবং বঙ্গবন্ধু কর্নার নির্মাণ করেন।
এবার আমাদের গন্তব্য গোপালগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত জেলার কেন্দ্রীয় মসজিদ 'কোর্ট মসজিদ'-এ। মসজিদটি ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমুদ্দিন মসজিদ উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় জেলা প্রশাসক কাজী গোলাম আহাদের তত্বাবধানে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। মসজিদটিতে সুদৃশ্য উচ্চ মিনারসহ বৃহদাকার প্রবেশ গেট রয়েছে।এছাড়াও একটি বড় গম্বুজ ও চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে।
এবারের গন্তব্য টুঙ্গিপাড়া। শহরের লঞ্চ-ঘাট বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি/লেগুনায় চলে যেতে হবে পাটগাতি। পাটগাতি থেকে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে। গোপালগঞ্জ জেলা সদরের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের আদি পৈতৃক নিবাস অবস্থিত। বর্তমান বাড়িটি নির্মাণ করেন বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ জমিদার শেখ কুদরতউল্লা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ এ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এ বাড়িতেই। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর দীর্ঘদিন বাড়িটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। ২০১২ সালে জরাজীর্ণ বাড়িটি সংস্কার করা হলে তখন এর কাঠামোগত পরিবর্তন হয়। আদি পৈতৃক বাড়ির পাশেই শায়িত আছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামময় বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
২০০১ সালের ১০ই জানুয়ারি ববঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধু-সমাধি কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মসজিদ, জাদুঘর, গবেষণা কেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র।
এখানেই শেষ হলো আমাদের গোপালগঞ্জ ভ্রমণ।
Like My Facebook
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক
বগুড়া ,রাজশাহী
22 Aug 2023 | ভিডিও দেখুন
বাঘা মসজিদ
রাজশাহী ,রাজশাহী
03 Jul 2023
খেরুয়া মসজিদ
বগুড়া ,রাজশাহী
01 Jul 2023
শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম
বগুড়া ,রাজশাহী
29 May 2023
যমুনা বহুমুখী সেতু
সিরাজগঞ্জ ,রাজশাহী
09 Jan 2023
পরীর দালান
টাঙ্গাইল ,ঢাকা
05 Jan 2023 | ভিডিও দেখুন
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা
নেত্রকোণা ,ময়মনসিংহ
10 Nov 2022
জিরো পয়েন্ট, নেত্রকোনা
নেত্রকোণা ,ময়মনসিংহ
10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন
একদিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ
রাজবাড়ী ,ঢাকা
10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন
দুই থেকে চার দিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ
রাজবাড়ী ,ঢাকা
10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন