ভোরে আলো ফোঁটার সাথে সাথেই রওনা দিবেন। ঢাকা থেকে রাজবাড়ী এসে রাজবাড়ি সদর উপজেলার পাঁচুরিয়ার অন্তর্গত মুকুন্দিয়া গ্রামে অবস্থিত কুঠি পাচুরিয়া বাবুর বাড়িতে। বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি মঠ। প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন দ্বারকা নাথ সাহা চৌধুরী। রাজা সূর্যকুমার ও জমিদার দ্বারকানাথ সাহার প্রজা হিতৈষী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে এ জেলায়। পাবলিক লাইব্রেরি,পল্লী চিকিৎসা ও শিক্ষা বিস্তারে দ্বারকা নাথ সাহার অবদান চিরস্মরণীয়। ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে জন্ম নেয়া দ্বারকা নাথ সাহা এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। পাশের মঠটিতে কে সমাহিত আছেন সে ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় নি। এখান থেকে ভ্যান/অটোরিকশাযোগে যেতে হবে দেড় কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত ডিএন সাহা স্মৃতি মন্দির।এই মন্দির কমপ্লেক্সটি রাজবাড়ী জেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়া গ্রামে অবস্থিত। দারকা নাথ সাহা চৌধুরী ছিলেন এই এলাকার প্রভাবশালী জমিদার। তাঁর পুত্র শ্রী সরোজেন্দ্রো নাথ সাহা তাঁর বাবার স্মরণে ১৩২৩ বঙ্গাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন।মন্দিরটি ‘পঞ্চ রত্ন’ (পাঁচটি রত্ন) রীতিতে নির্মির।পরবর্তীতে তাঁর স্মৃতিসৌধ মন্দিরের পাশে ডিএন সাহার স্ত্রীর স্মরণে আরও একটি ছোট ‘এক রত্না’ বা এক মণি ধরণের মন্দির নির্মিত হয়েছিল।যা কিছুদিন পূর্বে ধ্বসে পড়েছে।এই দম্পতির পুত্র সরোজেন্দ্রো গর্বের সাথে তাঁর বাবা-মায়ের অনন্ত প্রেমকে দুর্দান্ত দ্বৈত মন্দিরের মাধ্যমে সংরক্ষণ করেছিলেন।অসাধারণ এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই দর্শনার্থীরা আসেন। মন্দিরটি দেখা শেষে পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হয়ে চলে যেতে হবে আড়াই কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত বিনয় ভূষন সাহার বাড়ি। ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়িটি রাজবাড়ী জেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খানখানাপুরে অবস্থিত।অসাধারণ নির্মাণশৈলীর এই বাড়িটির নির্মাণ সাল বা নির্মাতা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাই নি। বাড়িটিতে এখনো একটি পরিবার বসবাস করেন। উনারা নিজেদের জনিদারের বংশধর বলে দাবি করেন। এবার আবার ছোটো খাটো একটা ভ্রমন। অটোরিকশা /বাসযোগে ঢাকা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক ধরে চলে যেতে হবে রাজবাড়ি শহরে অবস্থিত রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। গোয়ালন্দ মহকুমার বাণীবহের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদারের কাঁচারী ঘরটিতে তিনি ১৮৯২ সালে গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানটিই আজকের রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এই বিদ্যালয়ের নাম ছিলো 'দি গোয়ালন্দ ইংলিশ হাই স্কুল'। নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল।প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন স্কুল ভবনটি (লাল ভবন) বর্তমানে ব্যাবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইতিহাস বিবেচনায় এই ভবনকে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ।
চলে আসুন শহরে। এখান থেকে বাস/টেম্পু চড়ে ঢাকা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের কালুখালী বাজারে চলে যেতে হবে। কালুখালী বাজার থেকে ভ্যান নিয়ে যেতে হবে মালিয়াট মীম মসজিদ। রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদের নামফলক অনুযায়ী,১৩৬০ সালে স্থাপিত এই মসজিদটি নির্মান করেন মোঃ সিরাজ মন্ডল এবং তনু কবিরাজ। একগম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটির একতলা ভবনটিতে সম্প্রতি সংস্কার ও রঙের কাজ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,দূর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন ঐতিহাসিক এই মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে। এবার এখান থেকে অটোরিকশা নিয়ে বোয়ালিয়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে রসুলপুর - বালিয়াকান্দি সড়ক ধরে ১৩ কিমি গেলে পৌঁছে যাবেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে অবস্থিত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম বাঙ্গালী সাহিত্যিক, কালজ্বয়ী উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিস্থলকে ঘিরে রাজবাড়ীর এই স্থানটিতে গড়ে তোলা হয়েছে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র।১৮৪৭ সালের ১৩ ই নভেম্বর কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পদমদী গ্রামে বসেই তিনি রচনা করেছেন কালজয়ী সব গ্রন্থ। গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ, নাটক এবং উপন্যাস মিলিয়ে তিনি লিখেছেন মোট ৩৭ টি বই।তিনি 'বিষাদ-সিন্ধু' মহাকাব্যের জন্য বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন।১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীর নিজ গৃহে মীর মশারফ হোসেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে তার স্ত্রী কুলসুমের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়।মীর মশারফ হোসেনের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় দুই একর জায়গাজুড়ে লেখকের নিজ গ্রাম পদমদীতে ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র।লেখকের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন।এছাড়াও সারা বছর দর্শনার্থীরা এখানে আসেন লেখকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে।সরকারী ছুটির দিন এই স্মৃতিকেন্দ্রটি বন্ধ থাকে। আমাদের এবারের গন্তব্য বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রাম। অটোরিকশা নিয়ে যেতে যেতে প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট লাগবে। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামে জোড় বাংলা মন্দিরের অবস্থান।পাশাপাশি দুইটি মন্দির থাকায় এমন নামকরণ হয়েছে বলে মনে করা হয়।বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা দু'টি মন্দিরের একটির চূড়া খসে পড়েছে।রাজা সীতারাম রায় ১৬৫৫ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।মন্দিরটি উড়িষ্যার গৌড়ীয় রীতিতে নির্মাণ করা হয়েছিলো বলে জানা যায়।পরবর্তীতে শ্রী কৃষ্ণ রাম চক্রবর্তী রাজা সীতারাম রায়ের অনুরোধে নলিয়া গ্রামে এসে দেব মন্দির এবং বিগ্রহ রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মন্দির থেকে ৬৫০ মিটার দুরত্বে একই গ্রামে অবস্থিত হরি ঠাকুর বাড়ি। বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি মন্দির। বাড়িটির বিস্তারিত ইতিহাস জানা যায় নি। এখানেই শেষ হবে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমন।
Like My Facebook
ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক
বগুড়া ,রাজশাহী
22 Aug 2023 | ভিডিও দেখুন
বাঘা মসজিদ
রাজশাহী ,রাজশাহী
03 Jul 2023
খেরুয়া মসজিদ
বগুড়া ,রাজশাহী
01 Jul 2023
শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম
বগুড়া ,রাজশাহী
29 May 2023
যমুনা বহুমুখী সেতু
সিরাজগঞ্জ ,রাজশাহী
09 Jan 2023
পরীর দালান
টাঙ্গাইল ,ঢাকা
05 Jan 2023 | ভিডিও দেখুন
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা
নেত্রকোণা ,ময়মনসিংহ
10 Nov 2022
জিরো পয়েন্ট, নেত্রকোনা
নেত্রকোণা ,ময়মনসিংহ
10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন
একদিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ
রাজবাড়ী ,ঢাকা
10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন
দুই থেকে চার দিনে রাজবাড়ী জেলা ভ্রমণ
রাজবাড়ী ,ঢাকা
10 Nov 2022 | ভিডিও দেখুন