 
                            ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির হল ঢাকেশ্বরী। বলা হয়ে থাকে এর নামকরণ হয়েছে ‘ঢাকার ঈশ্বরী’ অর্থাৎ ঢাকা শহরের রক্ষাকর্ত্রী দেবী হতে। মন্দিরটির নামকরণের আরও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। দেবী মূর্তিটি মাটিতে ঢাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তাই এর নামকরণ হয়েছে ঢাকেশ্বরী। কিংবদন্তি রয়েছে যে, সেন রাজা বল্লাল সেন মূর্তিটি খুঁজে পান এবং তিনি দেবীর জন্য ১২০০ শতাব্দীর কোনো এক সময় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালক্রমে এ মন্দিরটি ঢাকার জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ঢাকা শহরের পলাশী ব্যারাক এলাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোর দক্ষিণে ঢাকেশ্বরী রোডের উত্তর পাশে একটি অনুচ্চ আবেষ্টনী প্রাচীরের মধ্যে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির অঙ্গনে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি সিংহদ্বার। সিংহদ্বারটি নহবতখানা তোরণ নামে অভিহিত। এ সিংহদ্বারটির ভেতর দিয়ে এক সময় হাতি যাতায়াত করত। পঞ্চরথ ও নাটমন্দির পাশাপাশি অবস্থিত। নাটমন্দিরকে ঘিরে আছে একসারি ঘর। মন্দিরের জলাশয় ও বিশ্রামাগারের পূর্ব পাশে সাধুদের উদ্দেশে নিবেদিত কয়েকটি সমাধি রয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল ফটক দুটি। এছাড়া মাঝখানে একটি ফটক আছে। মূল ফটক বরাবর দুর্গা মায়ের প্রতিমা। পাশের প্রবেশ গেটের পথেই নাটমন্দির আর একটু এগোলেই পুকুর। পুকুরের পাশেই আরেকটি ভবন। এখানে চারটি শিবমন্দির আছে ও তার পাশেই সন্তোষী মাতার মন্দির, অনুভোগের স্থান, রান্নাঘর, ফল কাটার কক্ষ, জুতা রাখার স্থান। পূর্ব পাশের বিশাল ভবনটি প্রশাসনিক ভবন ও কোয়ার্টার অফিস কক্ষ, গেস্ট রুম, সভাকক্ষ, লাইব্রেরি এবং মেলাঙ্গন। প্রতিটি ভবনের ওপর শিবমন্দির ও নাটমন্দির এ গম্বুজ আছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির কমপ্লেক্সের পূর্বদিকস্থ অন্তর্বাটিতে প্রধান মন্দির। একটি প্রাচীর দিয়ে একে বহির্বাটি থেকে আলাদা করা হয়েছে। এ সিংহ তোরণের সাহায্যে অন্তর্বাটিতে প্রবেশ করতে হয়। তোরণদ্বারের উপরে একটি ঝুলন্ত ঘণ্টা আছে। এ মন্দিরের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের শ্রী শ্রী দুর্গাদেবী বা দশভুজা মাতা স্বর্ণ নির্মিত বলে উপমহাদেশে বিখ্যাত ছিল। দেবীর সিংহাসন কাঠের ওপর রৌপ্য বসানো কারুকার্য খচিত ছিল। বর্তমানে এখানে প্রতি বছর ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। মূল মন্দির এলাকার ভবনগুলো উজ্জ্বল হলুদাভ ও লাল বর্ণের। মূল মন্দির প্রাঙ্গণের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে চারটি শিব মন্দির। মূল মন্দিরটি পূর্বাংশে অবস্থিত। এখানে দেবী দুর্গার ধাতু নির্মিত প্রতিমা রয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আরেকটি অন্যতম অংশ হল দু’পাশে বাঁধাই করা পুকুরটি, যা এখনও মন্দিরের শোভা বাড়ায়। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ আছে। পুকুরটির চারদিকে একটি পায়ে চলা পথ বিরাজমান। পুকুরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে আছে একটি প্রাচীন বটবৃক্ষ। প্রাচীন এই পুকুরটিতে পুণ্যার্থীরা স্নান ও ভোগ দিয়েথাকেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ইতিহাসের প্রায় সবই কিংবদন্তি। কথিত আছে, একবার রাজা বিজয় সেনের রানী লাঙ্গলবন্দে স্নানে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তার একটি পুত্রসন্তান জন্মেছিল, ইতিহাসে যিনি বল্লাল সেন নামে পরিচিত। বল্লাল সেন সিংহাসনে আরোহণের পর নিজের জন্মস্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। আরেকটি সূত্র জানায়, বল্লাল সেন একবার স্বপ্নে দেখেছিলেন এ জায়গায় জঙ্গলে ঢাকা পড়ে আছে দেবী। বল্লাল সেন এ দেবীকে উদ্ধার করে সেখানে স্থাপন করেন মন্দির, যা পরিচিত হয়ে ওঠে ঢাকেশ্বরী নামে। এ প্রবাদটিই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আছে। আরও একটি প্রবাদ আছে, সতী দেহের একান্নটি খণ্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে যে যে স্থানে পড়েছিল সে স্থানগুলো এক একটি পীঠস্থানে পরিণত হয়। সতী দেহ ছিন্ন হওয়ার পর তার কিরিটের ডাক অর্থাৎ উজ্জ্বল গহনার অংশ এই স্থানে পড়েছিল তাই এটা উপপীঠ। ডাক থেকেই ঢাকেশ্বরী নামের উৎপত্তি। তবে স্থাপত্য কৌশলের বিবেচনায় বল্লাল সেন কর্তৃক ঢাকেশ্বরী মন্দির নির্মাণের ব্যাপারটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। বিভিন্ন সময়ে এই মন্দিরের গঠন ও স্থাপনার নানা ধরনের পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে। বর্তমানে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি তত্ত্বাবধায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের একমাত্র লাইব্রেরিটি প্রশাসনিক ভবনের ২য় তলায় অবস্থিত। এখানে অন্যান্য পাঠাগারের মতো টেবিল-চেয়ারের ব্যবস্থা থাকলেও তা মন্দিরে আগত দর্শনার্থী বা অতিথিদের জন্যউন্মুক্ত নয়। তবে এখানে ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশের পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য ওকর্মকর্তারা বসে বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনা ও বিশ্লেষণ করেন। এটি এখন সভাকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই পাঠাগারে হিন্দু ধর্মীয় সব ধরনের বই সংগৃহীত আছে। বই সংখ্যা প্রায় ৫০০টি। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আলাদাভাবে নিজস্ব কোনো গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তবে মূল ফটকের পাশে ও বাইরে গাড়ি রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি তত্ত্ববধায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
১০ অরফানেজ রোড, লালবাগ, ঢাকা – ১২১১। ফোন: ৮৬১৪৯৯৫। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার পূর্ব পাশে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দক্ষিণ পশ্চিমে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের অবস্থান।লালবাগ কেল্লা থেকে ৩০০ মিটার উত্তরপুবে এই সুন্দর মন্দির।
Like My Facebook
 
                মিরিঞ্জা ভ্যালি
বান্দরবান ,চট্রগ্রাম
21 Nov 2024
 
                সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
সিলেট ,সিলেট
11 Jan 2024
 
                চেয়ারম্যান ঘাট
নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম
10 Jan 2024
 
                নলচিড়া ঘাট, হাতিয়া
নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম
09 Jan 2024
 
                ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক
নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম
07 Jan 2024
 
                যোগীর ভবন
বগুড়া ,রাজশাহী
06 Jan 2024 | ভিডিও দেখুন
 
                রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী ,রাজশাহী
05 Dec 2023
 
                মা ভবানী মন্দির
বগুড়া ,রাজশাহী
04 Dec 2023 | ভিডিও দেখুন
 
                ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক
বগুড়া ,রাজশাহী
22 Aug 2023 | ভিডিও দেখুন
 
                বাঘা মসজিদ
রাজশাহী ,রাজশাহী
03 Jul 2023
 
             
       Creating Document, Do not close this window...
        	Creating Document, Do not close this window...