কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহা-সড়কের দুপাশে বিস্তৃত শতবর্ষী মা গর্জন
গাছ সমৃদ্ধ দেশের প্রথম ও একমাত্র সর্ববৃহত্ প্রাকৃতিক গর্জন বাগান মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ এর অধীনে ১৯৩১ ও ১৯৩৫ সালে বনবিভাগ চকরিয়া উপজেলার মেধাকচ্ছপিয়া ও খুটাখালী মৌজার
৩৯৫দশমিক ৯২ হেক্টর বনাঞ্চলকে নোটিফিকেশন মুলে সংরক্ষিত বনভুমি হিসেবে ঘোষনা করা হয়। পরে মেধাকচ্ছপিয়া বিটের
অধীনে (কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উভয় পাশে লাগোয়া) ১০ হাজার ৩৩৭টি শতবর্ষী মাদার গর্জন গাছসমৃদ্ধ ৩৯৫ দশমিক
৯২ হেক্টর বা প্রায় ৯৭৮ একর জমিতে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার।
নতুন করে বৃক্ষ সম্পদ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষন, চিত্ত-বিনোদন ও পর্যটন উন্নয়নের লক্ষে ২০০৫ সালের এপ্রিলে পরিবেশ ও বন
মন্ত্রণালয় এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই বনভূমিকে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া দেয়। ঘোষণাকালে
এ উদ্যানের আওতায় ১০ হাজারের বেশি মাদার-ট্রি গর্জন থাকলেও বনদস্যুদের অব্যাহত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে বর্তমানে
রয়েছে ৯ হাজার মতো শতবর্ষী গর্জন বৃক্ষ। ১৯৯১ সালের পর থেকে এখানকার সবুজ বৃক্ষরাজিতে ভরপুর বনের পাহাড় দখল,
অবৈধ বসতি, পাকা দালান নির্মাণ সহ বনদস্যুদের দ্বারা বিশাল এ গর্জন বাগানের শতবর্ষী মাদার-ট্রিগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে।
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপূর এ জাতীয় উদ্যান। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার বৃক্ষপ্রেমীরা
ছুটে আসেন। বর্তমানে এ উদ্যানে পর্যটকদের জন্য আনুষ্টানিক ভাবে চালু করা হয়েছে ইকো ট্যুরিজম। ট্যুরিজম দেখতে আসার
জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে যে কোন বৃক্ষপ্রেমীর খুব সহজেই চোখে পড়বে। সারি সারি বিশাল
আকৃতির মাদার ট্রি গর্জন বাগান, ছোট ছোট পাহাড়, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমীদের মনে দোলা দেবে। নির্জন বনের ভেতর
দিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়বে মেছোবাঘ, হাতির পাল, বানর, উল্টোলেজ বানর, বনবিড়াল, খাটাশসহ শত প্রকার বন্যপ্রাণী,
বনমোরগ,, বন্য শূকর, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল, শ্যামাসহ দেড় শতাধিক প্রজাতির পাখি, গুইসাপ, হ্যাজা সাপসহ নানা
প্রজাতির সাপ ও বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ রাখা হচ্ছে। তবে তাতে দর্শনার্থীর বিপদের আশঙ্কা নেই বললেই
চলে। বিরক্ত হবে না বন্য প্রাণীরাও। বনের সারি সারি গাছের গায়ে বেঁধে দেওয়া রোপওয়ে বা দড়ির সেতুর ওপর দিয়ে তৈরি হয়েছে
চলাচলের রাস্তা। দর্শনার্থীদের জন্য এমন ব্যবস্থার নাম ইকো অ্যাডভেঞ্চার। কক্সবাজারের চকরিয়ার মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয়
উদ্যানে চালু হয়েছে এই ব্যবস্থা। কেবল কক্সবাজারে নয়, সারা দেশে এই প্রথম কোনো বনে চালু হলো ইকো অ্যাডভেঞ্চার
বিনোদন।
প্রকৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় ভ্রমণপিপাসুদের নীরবে ও নিরাপদে জীববৈচিত্র্য দেখার সুযোগ করে দিতে জানুয়ারি ২০১৮
সালে বন বিভাগের উদ্যোগে মেধাকচ্ছপিয়া উদ্যানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির নেকম ও ক্রেল প্রকল্পের
অর্থায়নে যুক্ত হলো ইকো অ্যাডভেঞ্চার। যার মধ্যে রয়েছে ইকো অ্যাডভেঞ্চারে ট্রি অ্যাডভেঞ্চারের মাধ্যমে সবুজ বন,
জীববৈচিত্র্য দেখার সুযোগ।
যেসব অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে এর মধ্যে ট্রি অ্যাডভেঞ্চার, সাইক্লিন, হ্রদে বোটিং, ফিশিং, টি হাউস, ইকো হাউস, তাঁবু জলসা,
হেমগ, গাছে ঝোলা, ট্রেল হাইকিং, মৎস্যশিকার, ক্যাম্পিং, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার অন্যতম। রাতে বা দিনে গাছের মাছায় উঁচুস্থানে
নিরাপদে বন্যপ্রাণী দেখা, রাতে গাছে রাত্রি যাপন, ঝুলিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়া, গাছের দোলনায় গা দুলিয়ে দেওয়াসহ
প্রকৃতির কোলে বিশ্রাম নেওয়ার অনন্য সুযোগ থাকছে এখানে। হেমক-এর মাধ্যমে গাছে ঝুলে থেকে প্রকৃতির কোলে বিশ্রাম
নেওয়ার অনন্য সুযোগ পাওয়া যাবে।
ট্রি রোপওয়ে অ্যাডভেঞ্চার -বড় গাছের সঙ্গে যুক্ত কাঠের সেতু দিয়ে হেঁটে ঘুরে দেখা যাবে উদ্যান। শতবর্ষী এক মা গর্জনগাছ
থেকে অন্য মা গর্জনগাছে রোপওয়ের মাধ্যমে পার হওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি উপভোগ করতে পারবেন এখানে।
জীপ লাইনিং -কোন উঁচু স্থান থেকে তারের সাহাযোগিতায় অপেক্ষকৃত নিচু জায়গা তে যাওয়াকে জীপ লাইনিং বলে।
ট্রি অ্যাডভেঞ্চার খরচ জনপ্রতি ১০০ টাকা। পাশাপাশি এখানে রয়ছে ক্যাম্পিং সুবিধা। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয়
নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষিত ইকো-গাইড। তবে প্রকৃতি-পরিবেশের ক্ষতি না করে নীরবে অবলোকন করতে হবে।
রাজধানী ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়াস্থ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের পরেই দেখা
মেলবে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে নির্মিত ইকো ট্যুরিজম ট্রি-এ্যাডভেঞ্চার।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার এর বাসে চকরিয়া নামবেন। সেখান থেকে ম্যাজিক গাড়ি করে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান যাবেন।
কক্সবাজার থেকে চকরিয়ার বাসে উঠলে মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান নামতে পারবেন।
Total Site Views: 1532248 | Online: 11