ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী উপমহাদেশের একমাত্র নারী
নওয়াব। ১৮৮৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি পশ্চিমগাঁওয়ের জমিদারি লাভ করেন। কিন্তু
ঐতিহ্যমণ্ডিত এই বাড়িটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় তা এখন বিলীনের পথে। এ ছাড়া
তার সম্পত্তির বড় অংশ কৌশলে দখল করে নিয়েছে একটি মহল। অবশেষে সংস্কৃৃতি মন্ত্রণালয়
ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর মালিকানাধীন সর্বমোট ৪ একর ৫৩ শতক সম্পত্তি প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তরকে সংরক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে সম্প্রতি। তার স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িতে
নির্মাণ করা হবে উন্মুক্ত জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা ছিলেন একাধারে জমিদার,
নারীশিক্ষার
প্রবর্তক, সমাজসেবক ও কবি। কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিমগাঁও গ্রামে ১৮৩৪ সালে
জমিদার বংশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আহমদ আলী চৌধুরী ছিলেন
হোমনাবাদ-পশ্চিমগাঁওয়ের জমিদার। তৎকালীন রক্ষণশীল পরিবেশে থেকেও গৃহশিক্ষকের
তত্ত্বাবধানে বাড়িতেই আরবি, ফারসি, উর্দুর পাশাপাশি
বাংলা ও সংস্কৃৃতে দক্ষতা অর্জন করেন তিনি।
উপমহাদেশের নারী জাগরণের আরেক অগ্রপথিক বেগম
রোকেয়ার জন্মের সাত বছর আগে ১৮৭৩ সালে কুমিল্লা শহরে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে ফয়জুন্নেসা কলেজ নামে পরিচিত। ১৯০১
সালে লাকসামে ফয়জুন্নেছা ডিগ্রি কলেজ ও বিএন হাই স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এখানে রয়েছে তার নির্মিত ঐতিহ্যবাহী দশ গম্বুজ মসজিদও।
নারীদের চিকিৎসাসেবা সহজ করতে ১৮৯৩ সালে নওয়াব
ফয়জুন্নেছা মহিলা ওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল
হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া ১৮৯৯ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া
কলেজের নির্মাণ কাজে তৎকালে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। তিনি যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন
জনহিতকর কাজেও।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী বাংলাদেশের নারী
সমাজের বিস্ময়। তিনি একজন সমাজহিতৈষী ও সাহিত্যিক ছিলেন। নওয়াব ফয়জুন্নেছা রচিত 'রূপজালাল'
কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালে। 'সঙ্গীতসার' ও 'সঙ্গীত
লহরী' নামে আরও দুটি কবিতার বই লিখেছেন তিনি। রানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে
ফয়জুন্নেছাকে 'নওয়াব' উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি ১৯০৩ সালে
মৃত্যুবরণ করেন। নওয়াব ফয়জুন্নেসাকে ২০০৪ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা
হয়।
কুমিল্লার লাকসাম থেকে আধা কিলোমিটার দূরে
পশ্চিমগাঁওয়ের ডাকাতিয়া নদী তীর ঘেঁষে তার ঐতিহাসিক নবাববাড়ির অবস্থান।
Total Site Views: 1449824 | Online: 7