ত্রিপুরার মহারাজা ২য় রত্নমাণিক্য
(১৬৮৫-১৭১২ খ্রি.) এর নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু তিনি তা সম্পন্ন করতে পারেননি।
পরবর্তীতে মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ সম্পন্ন করেন।
খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরটি বাংলার টেরাকোটা স্থাপত্যের
নিদর্শন বহন করছে। এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত জগন্নাথ, বলরাম
ও সুভদ্রার মূর্তি প্রকৃতপক্ষে ত্রিপুরার একটি মন্দিরে স্থাপিত ছিল। পরবর্তীকালে
মূর্তিগুলি এই মন্দিরে নিয়ে আসা হয়।
মন্দিরটির ইটভাটা মন্দিরের স্থাপত্যের
সাধারণ শৈলী। অষ্টকোণাকৃতির স্থাপত্য পরিকল্পনার এই মন্দিরটি সতের রত্ন বিশিষ্ট
হলেও বর্তমানে অধিকাংশ রত্ন কালের পথ পরিক্রমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মন্দিরের
দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটটি করে ষোলটি সহ কেন্দ্রীয় রত্ন নিয়ে রত্নের সংখ্যা
সতেরটি ছিল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশরত্ন মন্দিরের সাথে এই মন্দিরের পার্থক্য
রয়েছে। মন্দিরের চূড়াগুলি রথবিন্যাসযুক্ত কিংবা খাঁজকাটা দেউল রীতির নয়।
চূড়াগুলি আটকোণা বিশিষ্ট ছাতা আকৃতির। মন্দিরটি কয়েকধাপে ক্রমহ্রাসয়মানভাবে
উপরে উঠে গেছে। কেন্দ্রীয় চূড়াটির উপর রয়েছে কলস শীর্ষ। মোচাকৃতির এই চূড়ার
স্থাপত্য নকশা ইউরোপিয়ান গির্জা স্থাপত্য নকশা দ্বারা প্রভাবিত। মন্দিরটির ব্যাস
প্রায় ৫২.৫০ মিটার। বাইরের দিক থেকে তিন তলা মনে হলেও মন্দিরটি ভিতরের দিক থেকে
পাঁচ তলা পর্যন্ত উঠা যায়। প্রথম তলার উচ্চতা প্রায় ৪.০৫ মিটার। ২.১০ মিটার উঁচু
চারটি খিলানাকৃতির প্রবেশপথ দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করা যায়। প্রবেশপথের দু’পাশে
রয়েছে খিলান নকশা। দোতলায় ছয়টি খিলানাকৃতির জানালা রয়েছে। মন্দিরের প্রতিটি
ধাপেই রয়েছে খিলান নকশা। এছাড়াও মন্দিরটিতে ফুল, লতা-পাতা,
ঘন্টা ও জ্যামিতিক নকশায় অলংকৃত করা হয়েছে। মন্দিরটির
অষ্টকোণাকৃতির ভূমি পরিকল্পনার ধারণাটি বিহারের সাসারামে শেরশাহ সুরের সমাধিসৌধের
অষ্টকোণাকৃতির ভূমি নকশার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
জগন্নাথবাড়ী,
কৃষ্ণপুর, কুমিল্লা।
জগন্নাথ দেবের মন্দির বা সতেরো রত্ন
মন্দির বাংলাদেশের কুমিল্লা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কৃষ্ণপুর
গ্রামের জগন্নাথবাড়ী নামক স্থানে অবস্থিত জগন্নাথের প্রতি উৎসর্গিত একটি হিন্দু
মন্দির।
Total Site Views: 1388721 | Online: 5