পেজ ভিজিট: ২৫,৬২,৩৩১ | অনলাইন: ২
English
বিভাগ অনুসারে দেখুন

ফেনীর জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান নিয়ে এক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা- প্লান-1


জেলার ভিডিও দেখুন
Card image cap

শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার ও জহির রায়হানের পৈতৃক বাড়ি

Card image cap

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

Card image cap

বিলোনিয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ

Card image cap

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা ও রিসোর্ট

Card image cap

সাত মঠ / সাত মন্দির

Card image cap

প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি


ফেনীর জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান নিয়ে এক দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা- প্লান- ১

সুধী দর্শক mytourbd.com এ আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা পর্যটকদের জন্য তিন রকমের প্লান করে থাকি, আর এমন ভাবে প্লানটা করার চেষ্টা করি যাতে পর্যটকরা এই প্লানটি অনুসরণ করে নিজেরাই ভ্রমণ সম্পন্ন করতে পারেন।

প্ল্যান ১ হলো শুধুমাত্র ওই জেলার বিখ্যাত স্থানগুলো নিয়ে ভ্রমণ পরিকল্পনা, যা এক থেকে দুই দিনের হয়ে থাকে। তবে আমাদের ফেনীর এই প্লানটি একদিনের। ফেনী জেলার সকল উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়াতে আমরা এক দিনের এই ভ্রমণ প্লান তৈরী করেছি। ফেনীর সকল উপজেলার ১৬ টি স্থান সংযক্ত করা হয়েছে এই প্লানে। তবে সময় ও দূরত্ব বিবেচনায় কিছু স্থান বাদ দেয়া হয়েছে। দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে হবে এই ভ্রমণ।

ঢাকা থেকে চট্রগ্রামের পথে ১৬০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ফেনী জেলা। সাধারণত আড়াই থেকে তিন ঘন্টায় ঢাকা থেকে পৌঁছা যায় ফেনীতে। ফেনী নদীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয়েছিল ফেনী। ১৯৮৪ সালের পূর্বে এটি নোয়াখালী জেলার একটি মহকুমা ছিল। ১৯৮৪ সালে ফেনী মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি চট্রগ্রাম প্রশাসনিক বিভাগের অধীন একটি জেলা। পাগলা মিয়ার স্মৃতি আর শমসের গাজীর বীরত্ব গাঁথা ছাড়াও ফেনীর রয়েছে অনেক অজানা ইতিহাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। একদিনের এই ভ্রমণে আমরা তাই উন্মোচন করতে চেষ্টা করবো।

ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেট থেকে বাসে ও ট্রেনে আসা যায় ফেনীতে সায়েদাবাদ থেকে সারা দিনই আছে ফেনীর গাড়ি, কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে উঠা যায় ফেনী যাওয়ার জন্য, সারা দিনই রয়েছে চট্রগ্রাম এর কয়েকটি ট্রেন যা এক দুই ঘন্টা পর পর ছেড়ে যায়। চট্রগ্রাম ও সিলেট থেকে দিনে পাহাড়িকা ও রাতে উদয়ন ট্রেন ছেড়ে যায় এই দুই জায়গার উদ্দেশে যে কোনো যান এ করে চলে আসুন ফেনীতে। আমাদের প্লানটা সকাল থেকে ফলো করার মতো।

ভ্রমণ প্লান: বিলোনীয়া রেল স্টেশন ও স্থল বন্দর - বিলোনিয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ - বেড়াবাড়ীয়া রাবার ড্যাম - মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমর স্মৃতি স্তম্ভ - শমসের গাজীর দিঘি - মোঘল স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন চাঁদগাজী মসজিদ - হাজার বছরের প্রাচীন আর্য সভ্যতার শিল পাথর - সাত মঠ ও বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি - শমসের গাজীর কেল্লা, গুহা, দিঘি - শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট - মুহুরী প্রজেক্ট সেচ প্রকল্প - দাগনভূঁইয়া চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদ - প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি - পাগলা মিঞাঁর মাজার ও তাকিয়া মসজিদ - বাংলাদেশের প্রাচীনতম শিক্ষায়তন ফেনী পাইলট হাইস্কুল ও কলেজ - রাজনন্দিনীর বা রাজাঝির দীঘি - ফেনী ট্রাঙ্ক রোড।

এক দিনের এই ভ্রমণ প্লানটি সম্পন্ন করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই আলাপ করে গাড়ি নিবেন। সারা দিনে সিএন জিতে ১৫০০ থেকে ১৮০০শ টাকার মতো নিবে। আলাদাও নিতে পারেন, ফেনী থেকে পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ঘুরে বারইয়ার হাট পর্যন্ত একবার এবং বারইয়ার হাট থেকে মুহুরী প্রজেক্ট, দাগনভূইয়া হয়ে ফেনী ট্রাঙ্ক রোডে।

ফেনী  ভ্রমণ বিস্তারিতঃ ফেনীর ট্রাঙ্ক রোড থেকে প্রথমে পরশুরাম এর বাউরখুমায় বিলোনীয়া রেল স্টেশন ও স্থল বন্দর। ১৯২৯ সালে ফেনী-বিলোনিয়া ২৭ কিলোমিটারের এ রেলপথ চালু করা হয়। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় এক সময় এ রেলপথ ছিল ফেনী থেকে ফুলগাজী ও বিলোনিয়ার শিক্ষার্থী, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একমাত্র মাধ্যম। ১৯৭১ সালের পর রেল যোগাযোগের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগের উন্নতি হওয়ায় কদর কমে যায় এ রেলপথের। ব্যাপক লোকসানের কারণে ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট কর্তৃপক্ষ ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ইস্টিশন মাস্টারের অফিস ঘর ও রেল লাইনের একটুখানি অংশই শুধু দেখার আছে। দীর্ঘ ২২ বছর পরিত্যক্ত থাকা ফেনী-বিলোনিয়া রেল লাইনটি পুনরায় চালু করা হচ্ছে বলে শুনা যাচ্ছে।

 এই রেল ইস্টিশনে দাঁড়িয়েই দেখা যায় বিলোনিয়া স্থলবন্দর। বেশি সময় নষ্ট না করে ব্যাক করবো।

বের হতেই দেখা যাবে বিলোনিয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ। বিলোনীয়া ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত হতে কাছেই। এখানেই হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধ বিলোনীয়া ২য় যুদ্ধ। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিসহ বিশ্বের বহু সামরিক কলেজে পাঠ্য বিলোনিয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধ বা ‘সেকেন্ড ব্যাটল অব বিলোনিয়া বাল্‌জ। অঞ্চলটি মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের ২ নম্বর সেক্টরের অধীন ছিল। এ যুদ্ধে যৌথ বাহিনীর ১৩৭ জন শহীদ হন। শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিলোনিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভটি। পরশুরাম বাজার থেকে বক্সমাহমুদ হয়ে ছাগলনাইয়া যেতে হবে।

এবার পরশুরাম থেকে বক্স মাহমুদ রোডে বেড়াবাড়ীয়া রাবার ড্যাম। পরশুরামের কহুয়া নদীর ওপর নির্মিত বেড়াবাড়িয়া রাবার ড্যাম হতে পারে আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র। রাবার ড্যামের নির্মাণশৈলী দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী ছুটে আসেন বেড়াবাড়িয়া রাবার ড্যামে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্যামটি নির্মিত হলেও অনেকের কাছে এটি দর্শনীয় স্থান।

রাবার ড্যামটির একটু সামনে গেলেই সম্মুখ সমর স্মৃতি স্তম্ভ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বিলোনিয়ার পাশাপাশি সালদা নদী, হিলি, গঙ্গাসাগর ও জামালপুর সহ অনেক জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ রচিত হয়েছিল। এই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই পরশুরামের সলিয়া দিঘী এলাকায় নির্মাণ করা হয় এই সম্মুখ সমর স্মৃতি স্তম্ভ।

আর একটু সামনে এগোলেই পরশুরাম পৌরসভার সাতকুচিয়া গ্রামের ছাগলনাইয়া-পরশুরাম সড়কের দক্ষিন পশ্চিম পাশে রয়েছে বিখ্যাত শমসের গাজীর দিঘি। ধারণা করা হয়- চারশ' বছর আগে খন্ডল পরগনার এমন একটি দিঘি খনন করেন তৎকালীন শাসক ভাটির বাঘ শমসের গাজী। পাঁচশ মাটিয়ালের দীর্ঘ তিন বছর সময় লেগেছিল দীঘিটি খনন করতে। এ দীঘির আয়তন পাড়সহ প্রায় ১৮ একর।

এই রাস্তায় যেতে হবে ছাগলনাইয়া, মাঝে বক্স-মাহমুদ বাজার, এখানে খন্ডল এর মিষ্টি বিখ্যাত খেয়ে যেতে ভুলবেন না।

 

এইখান থেকে চলে আসুন ছাগলনাইয়া বাজারের একটু আগে চাঁদগাজী জামে মসজিদ দেখতে যা বাংলাদেশের অন্যতম মোঘল আমলের অনিন্দ্য সুন্দর প্রাচীন এক স্থাপনা। হিজরি ১১১২ সালে চাঁদ গাজী ভূঁইয়া ২৮ শতক জমির ওপর এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি ছাগলনাইয়ার চাঁদগাজী বাজারের পাশে অবস্থিত। মসজিদের সামনের অংশে শ্বেত পাথরের নামফলকে এর বর্ণনা রয়েছে। মসজিদটি দেখে চলে আসুন ছাগলনাইয়া উপজেলায় শিলুয়া গ্রামে

এখানে রয়েছে এক প্রাচীন ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ হাজার বছরের প্রাচীন আর্য সভ্যতার শিল পাথর। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাবদ্ধ একটি স্থাপনা এই শিলুয়ার শীল পাথর। এই পাথরটি দুই হাজার বছরের স্মৃতি ধারণ করে চলেছে। শিলা পাথরের গায়ে খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে প্রচলিত ব্রাক্ষ্মী লিপির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর থেকে এখানে শিকারী আর্য্য জাতির পদাচরণের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং ধারণা করা হয় তৎকলীন সময়ে এখানে মানুষের বসবাস ছিল। উল্লেখ‍্য, এখানকার স্থানীয় একটি মিথ আছে যে এটি মহাশূন‍্য হতে ছিটকে আসা একটি শিলা খন্ড। এই শিলা খন্ডটি দেখতে প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে অনেক পর্যটক আসেন। এলাকায় শিল ঘর হিসাবে এটি বেশ পরিচিতি।

এবার যাবো বাংলাদেশের একমাত্র সাত মঠ, বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি দেখতে ছাগলনাইয়া বাজারে। সাত মঠ ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলা শহরের পশ্চিমে বাঁশপাড়ায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মঠ। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সাত মঠ। বাংলাদেশের আর কোথাও একসঙ্গে এতো অধিক সংখ্যক মন্দির নেই। প্রতিটি মন্দিরের গায়ে অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যময়। প্রতিটি মন্দিরের চূড়া একটি অন্যটির থেকে ভিন্ন! মন্দিরটি এখন পরিত্যক্ত। পাশেই রয়েছে ছাগলনাইয়ার তৎকালীন বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি। তৎকালীন হিন্দু জমিদার বিনোদ বিহারীর এই বাড়িটি আট একর জায়গাজুড়ে নির্মিত। ১৯৪৮ সালের দিকে জমিদার বিনোদ বিহারি বাড়িটি রেখেই কলকাতা চলে যান। বাড়ির পাশে রয়েছে সাতটি চিতা মন্দির।

 এবার ছাগলনাইয়া বাজার থেকে যেতে হবে শুভপুরের কিছুটা আগে, সোনাপুরের চম্পকনগরে, যেখানে রয়েছে ভাটির বাঘ খ্যাত শমসের গাজীর স্মৃতি গাজীর কেল্লা, গুহা, দিঘি। শমসের গাজী ছিলেন কিংবদন্তি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী ও ত্রিপুরার শেষ স্বাধীন নবাব। নবাব সিরাজুদ্দৌলার পর তিনিই ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে প্রথম নিহত হন। এক সময়কার প্রাসাদ বর্তমানে বাগান বাড়ি ছাড়া কিছুই নয়, ৫ টাকায় টিকেট নিয়ে প্রবেশ করতে হবে এ বাগান বাড়ি এলাকায়। মাটি খুঁড়লেই এখানে পাওয়া যায় পুরোনো ভবনের ইটের টুকরো। এটি ৩৫০ বছর পূর্বে নির্মিত শমসের গাজীর জমিদার বাড়ি যা বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। বাড়ির সীমানা ঘেষেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মাঝে (নো ম্যানস ল্যান্ড) অবস্থিত শমসের গাজীর দীঘি (এককুইল্লা দীঘি)। সম্ভবত এক কুল বাংলাদেশে এবং তিন কুল নোম্যান্স ল্যান্ডে পড়ায় এক কুল্লা দিঘিও বলা হয়ে থাকে এ দিঘিটিকে।  রহস্যে ঘেরা এই দীঘি নিয়ে নানারকম কথা প্রচলিত আছে। অপূর্ব এই দিঘির সম্মুখে ভারতের সীমান্ত, পিছনে শমসের গাজীর দিঘির পাড়ে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক ফলজ গাছের উদ্যান। বাগান বাড়ির উপরের অংশ থেকে নেমেই দেখবেন একটি ১০০ মিটার লম্বা ছোট্ট সুড়ঙ্গ পথ। যেটি বর্তমানে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রচলিত আছে, এই সুড়ঙ্গ দিয়ে রাণীরা দীঘিতে গোসল করতে যেতেন।

 শমসের গাজীর প্রাসাদের ১ কিমি দূরে সোনাপুর গ্রামেই রয়েছে ব্যাক্তি উদ্যোগে তৈরী করা একটি রিসোর্ট যার নাম শমসের গাজীর বাশের কেল্লা রিসোর্ট, এটি তৈরী করেন এ এলাকার বাসিন্দা সংসদ সদস্য জনাব ওয়াদুদ ভূঁইয়া। শমসের গাজীর স্মৃতিতে গড়ে তোলা এই পর্যটন কেন্দ্রটি থাইল্যান্ড ও জাপানের বিভিন্ন শৈল্পিক রেস্ট হাউসের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এটির ভেতরের এবং বাইরের সবকিছুর নির্মাণশেলীতে বাশেঁর ব্যবহার করা হয়েছে, এ কারণেই হয়তো বাঁশের কেল্লা নামকরণ। এখানে রয়েছে সবুজ মাঠ, পালিত পশু-পাখি, কৃত্রিম লেক, লেকে স্পিড বোর্ট এ ঘুরার বেবস্থা। ২০ টাকা প্রবেশ ফিতে ঘুরে আসতে পারেন দারুন এ শৈল্পিক রিসোর্টে। তবে বাহির থেকে সবই দেখা যায় তাই ভেতরে ঢুকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলুন বারইয়ার হাট।

  বিশ্বরোড পার হয়ে আবার সি এন জি নিতে হবে বাকি স্পট গুলো দেখার জন্য। বারইয়ার হাট থেকে জোরারগঞ্জ হয়ে এবার যাবো ফেনী জেলার সবচেয়ে সুন্দর জায়গা মুহুরী সেচ প্রকল্প, লোকে চিনে মুহুরী প্রজেক্ট নামে। মুহুরী প্রজেক্ট হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও এখানে অবস্থিত। এখানেই দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম মৎস্য প্রকল্পগুলো এই মুহুরী প্রজেক্টেই। একপাশে নদী আর একপাশে মাছের ঘের, ভাসমান   মৎস চাষ দেখবেন এখানে, দূরে নদীর চরে মহিষের বাথান আর অজস্র পাখির কলকাকলি। মাছ ধরেই এখানে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। স্লুইসগেটে ফিরে এসে দেখুন কিভাবে একটি নদীতে বাঁধ দিয়ে চাষাবাদের পানি সংরক্ষণ করা হয়। বর্ষায় একাধিক বার পানি ছাড়া হলেও শীত কালে পানি ছাড়া হয় না, লিকেজ দিয়ে যে পানি বের হয়ে যায় তা দিয়েই লেভেল মেইনটেইন করা হয়। তারপরও দরকার হলে পানি ছাড়া হয়। এখানে রয়েছে নৌকা ভ্রমণ এর বেবস্থা।মুহুরী প্রজেক্ট থেকে সিএনজি বা নিজের গাড়ি নিয়ে সরাসরি কুঠিরহাট ও ফাজিলের ঘাট রোড হয়ে চলে আসুন দাগনভূঁইয়া বাজারে।

নোয়াখালী রোডে একটু গেলেই দেখতে পাবেন মোঘল আমলের অপূর্ব এক নিদর্শন দাগনভূঁইয়া জামে মসজিদ বা চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদ। নোয়াখালীতে মোগল বিজয়ের স্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে দাগনভূঞার চৌধুরী দরজা জামে মসজিদ। এটি বর্তমানে অলি আহমদ ভূঞা চৌধুরী জামে মসজিদ নামে পরিচিত। প্রায় সাড়ে তিনশ’বছরের পুরনো এ মসজিদ বৃহত্তর নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী এবং মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। ১৬৭০ সালে নোয়াখালী অঞ্চলে মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ার পর বারো ভূঞা নামে একদল মোঘল সদস্য এ নোয়াখালীতে আসেন। এদের মধ্যে একজন সেনাপতি দাগনভূঞা চৌধুরী এ জেলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। সেই থেকে এ জায়গার নাম হয় দাগনভূঞা। এ মসজিদের অপূর্ব কারুকার্য মুগ্ধ করবে নিমিষেই। বাড়ি ও মসজিদ থেকে পূর্বদিকে ফেনী ও বসুরহাট সড়কে একশ একর জমির ওপর দাগনভূঞা নামে একটি বাজারও স্থাপন করেন তিনি। দাগনভূঞা চৌধুরী বাড়ির সামনে কবরস্থানের পাশে স্থাপিত ফলকে দেখা যায় ১৬৭২ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদটি নির্মাণশৈলী মোঘল আমলের অনুপম নিদর্শন। মসজিদটি দেখে একই রাস্তায় চলুন সামনের দিকে।

সেবারহাট বাজারের কাছে ব্রিজের পাশেই প্রতাপপুর যাওয়ার রাস্তা, বাজারের পাশেই প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি  তিনি নিজ নামেই তিনি নির্মাণ করেন রাজপ্রাসাদসম বাড়ি। জমিদার বাড়িটির সীমানা সাড়ে ১৩ একর। বাড়িতে রয়েছে থাকার ঘর, অথিতি শালা, কাচারি ঘর, পূজার ঘর, অনেক খলা জাএগা এবং মোট ১৩টি পুকুর। এতো পুকুর বাংলাদেশের আর কোন জমিদার বাড়িতে নেই। রামনাথ কৃষ্ণ সাহা বাংলা ১২২৮ সালের ১৩ ফাল্গুন জমিদার বাড়িটির নির্মান কাজ সমন্ন করেন। রামনাথরা ছিলেন পাঁচ ভাই। তারা থাকতেন পাঁচটি দ্বিতল ভবনে। এখনো প্রতি বছর বৈশাখে সনাতন ধর্মালম্বীরা এ বাড়িকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী উৎসব পালন করেন। সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন প্রতাপপুরের জমিদারদের তৈরী করা প্রতাপপুর হাইস্কুল। প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি এলাকায় রাজবাড়ি, বড় বাড়ি হিসেবে ও পরিচিত।

এখন থেকে আবার দাগনভূইয়া ও মহিপাল হয়ে চলে আসুন ফেনী শহরের ট্রাঙ্ক রোডে

পাগলা মিঞাঁর মাজার ও তাকিয়া মসজিদ দেখতে। স্থানীয়দের কাছে তাকিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। ফেনী অঞ্চল ও এর আশে পাশের সকল ধর্মের মানুষের কাছে এটি এক পরম তীর্থ কেন্দ্র। তিনি ১৮২৩ সালে (বাংলা ১২৩০ সালে) ফেনীর ফাযিলপুরের ছনুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান সাধক ১৮৮৭ সালে (১২৯৩ বাংলা সনের ১৩ই শ্রাবণ) রোজ বুধবার মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ফেনীর তাকিয়া বাড়িতে ইন্তেকাল করেন এবং এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।  প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের প্রথম বৃহষ্পতিবার (তাঁর জন্মদিনে) ও শুক্রবার তাকিয়া বাড়িতে পাগলা মিয়ার ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়। তাঁর আধ্যাত্নিক শক্তি সম্পর্কে ফেনী অঞ্চলে বহু জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। এখনো প্রতিদিন তাঁর মাজারে মানুষ দলে দলে ফাতেহা পাঠ করে, জেয়ারত করে এবং মানত করে।

মাঝার থেকে বের হয়ে এবার আসুন ফেনীর প্রাণ কেন্দ্রে ফেনী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। ফেনী সরকারী পাইলট স্কুল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যালয়। নোয়াখালী অঞ্চলের মধ্যে ফেনী পাইলট হাইস্কুল সর্বপ্রথম হাইস্কুল। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল ফেনী শহরের কেন্দ্রস্থলেই অবস্থিত। কিংবদন্তি মহাকবি নবীনচন্দ্র সেনের হাতেই এই বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন ফেনীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক। রাজাঝির দিঘির পাড়েই এই স্কুল।

এবার চলুন দেখে নেই ৭০০ বছরের প্রাচীন দিঘি রাজনন্দিনীর বা রাজাঝির দীঘি। ত্রিপুরা মহারাজের প্রভাবশালী একজন রাজা, তার কন্যার অন্ধত্ব দুর করার মানসে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে রাজাঝির দিঘি রাজনন্দিনীর দিঘি খনন করেন বলে  জানা  যায়। ১৮৭৫ সালে ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দপ্তর গড়ে তোলা হয় এই রাজাঝির দিঘির পাড়ে। এটি ফেনী শহরের মধ্যে স্থানে অবস্থিত। এ দীঘির উত্তর পূর্ব পারে শিশুদের জন্য একটি পার্ক রয়েছে, প্রতি সন্ধ্যায় দক্ষিণ পশ্চিম পারে ক্লান্ত সময় পার করেন এখানকার মানুষজন। সন্ধ্যাও হয়ে যাবে, এবার ফেনীর ট্রাঙ্ক রোডে এসে এক দিনের ফেনী ভ্রমণের পরিসমাপ্তি।।

 

এই ভ্রমণ প্ল্যান ছাড়াও সারা দেশের পর্যটন স্থান সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের চ্যানেল গুলো সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন।

ফেনী জেলার সকল ভ্রমণ জায়গার ভিডিও: 

https://www.youtube.com/watch?v=Tavd-Xz05g0

বিজ্ঞাপন - অনলি টুটুল

Like My Facebook

সর্বশেষ

মিরিঞ্জা ভ্যালি

বান্দরবান ,চট্রগ্রাম

21 Nov 2024

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সিলেট ,সিলেট

11 Jan 2024

চেয়ারম্যান ঘাট

নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম

10 Jan 2024

নলচিড়া ঘাট, হাতিয়া

নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম

09 Jan 2024

ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক

নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম

07 Jan 2024

যোগীর ভবন

বগুড়া ,রাজশাহী

06 Jan 2024 | ভিডিও দেখুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী ,রাজশাহী

05 Dec 2023

মা ভবানী মন্দির

বগুড়া ,রাজশাহী

04 Dec 2023 | ভিডিও দেখুন

ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক

বগুড়া ,রাজশাহী

22 Aug 2023 | ভিডিও দেখুন

বাঘা মসজিদ

রাজশাহী ,রাজশাহী

03 Jul 2023

Creating Document, Do not close this window...