পেজ ভিজিট: ২৫,০০,৫৮৪ | অনলাইন: ১২
English
বিভাগ অনুসারে দেখুন

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল


পরিচিতি

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি সংরক্ষিত চিরহরিৎ বনাঞ্চল এবং বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ (কমলগঞ্জ) সড়কের পশ্চিম পাশে জাতীয় এ উদ্যানের প্রবেশপথ। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন করে এবং তা-ই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যে এই বনের প্রায় ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দওয়া হয়।


উঁচু নিচু টিলা জুড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গঠন। পাহাড়ি টিলার মাঝে মাঝে এ বনে চলার পথ। এখানকার মাটিতে বালুর পরিমাণ বেশি। বনের ভেতর দিয়েই বয়ে গেছে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ছড়া। তবে এসব ছড়াগুলোর বেশিরভাগই পানিতে পূর্ণ থাকে বর্ষাকালে। সামান্য যে কটি ছড়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে সেসব এলাকায় বন্যপ্রাণীদের আনাগোনা বেশি। নিরক্ষীয় অঞ্চলের চিরহরিৎ বর্ষাবন বা রেইন ফরেষ্টের মতো এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলোর জন্য প্রতিযোগিতা করে এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে, এবং অনেক ওপরে ডালপালা ছড়িয়ে চাঁদোয়ার মত সৃষ্টি করে। এই বন এতই ঘন যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়েনা বললেই চলে। 


জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রানীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। লাউয়াছড়ার বনেই রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির উল্লুক (Hoolock Gibbon)। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে এ উল্লুক বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। উল্লূক ছাড়াও এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ। 


উদ্যানের প্রবেশপথ ধরে কিছুদূর চলার পরে ভেতর দিয়েই চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেল লাইন। এর পরেই মূলত জঙ্গলের শুরু। নির্দিষ্ট হারে প্রবেশ মূল্য দিয়ে এ বনের ভেতর প্রকৃতি ভ্রমণ করা যায়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য বনে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ রয়েছে। তিনটি পথের মধ্যে একটি ৩ ঘণ্টার পথ, একটি ১ ঘণ্টার পথ আর অপরটি ৩০ মিনিটের পথ। প্রশিক্ষিত গাইডের সহায়তায় বনের একেবারে ভেতর পর্যন্ত যাওয়া যায়। প্রকৃতিকে বিরক্ত না করে তৈরি করা এ তিনটি পথে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির কীটপতঙ্গ, গাছপালা, পাখি ও অর্কিড। ভাগ্য ভালো হলে হনুমান, বানর এবং উল্লুকেরও দেখা মিলতে পারে। বছরজুড়েই এই বনে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়। সাধারণ পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ মাস ভালো সময়। লাউয়ছড়ায় ভেষজ উদ্ভিদের বাগান


লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেই রয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ভেষজ বাগান আরগ্য কুঞ্জ। মাগুর ছড়া গ্যাস কুপ পেরিয়ে প্রায় আড়াই কিলো এগুলেই হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে ভেষজ বাগান আরগ্য কুঞ্জ। পার্কের ২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এ ভেষজ বাগানে রয়েছে ৭৯ প্রজাতীর ঔষধী গাছ । যার অধিকাংশই আজ বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্তীর পথে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে গাছগুলো গায়ে কোন নাম না দেয়াতে গাছের পরিচয় জানতে একটু কষ্ট হবে। আপনি আরগ্য কুঞ্জের বিভিন্ন ঔষদি বৃক্ষ দেখে বুঝতে পাবেন বাংলাদেশ এক সময় ভেষজ উদ্ভিদের জন্য কত সমৃদ্ধ ছিল?

শ্যামলী পর্যটন


ভ্রমণ পিপাসুদের কথা ভেবেই লাউয়াছড়া ফরেষ্ট জোনের শ্যামলীতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি পিকনিক স্পট। সবুজের অপরূপ সাজে সজ্জিত শ্যামলী। প্রকৃতিপ্রেমিক , ভ্রমণ বিলাসী ও সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান এটি। এখানে রয়েছে নানা প্রকার বৃক্ষরাজি। দেশের আর কোথাও একই সাথে এত বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ দেখা যায় না। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভানুগাছ সড়ক ধরে ৭ কি.মি.দূরে শ্যামলীর অবস্থান। শ্রীমঙ্গল থেকে শ্যামলীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার পর পরই প্রথমে চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশে দৃষ্টিজুড়ে চায়ের বাগান। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাস্তা পেরিয়ে চোখে পড়বে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা রাবার গাছ। এরপর পরই সহজেই চোখে পড়বে কাশফুলের সাদা পাহাড়। নীল আকাশের নিচে সবুজের গালিচা, তারই একপাশে শরতের বাতাসে দোল আনমনে খেয়ে যাচ্ছে কোমল কাশফুলগুলো। তবে দৃষ্টিনন্দন ও মনোহারী এই প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে হলে অবশ্য শরতকাল আসলে ভাল হয়। এরপর সামনে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে রাস্তার দু’পাশে লম্বা লম্বা গাছগুলো গায়ে বনলতাগুলো যেন অতি নিবিড়ভাবে আদরে জড়িয়ে আছে। ছোট ছোট কয়েকটি পাহাড় আর কিছুক্ষণ পর দেখতে পাবেন সূর্য যেন আপনাকে দেখে লজ্জায় লুকিয়ে যাচ্ছে গায়ের ফাঁকে । যতই এগুতে থাকবেন সূর্য ততই লুকাতে থাকবে। এ যেন এক লুকোচুরি খেলা । একসময় আপনার শরীরে শীতল বাতাসের স্পর্শ পাবেন । চারিদিকে দেখতে পাবেন শুধু সবুজ আর সবুজ, যেন আপনি সবুজ ঢুকে আছেন । আর এটাই হলো শ্যামলী । শ্যামলী ডিপ ফিজাপ এরিয়া


শ্যামলী কিংবা লাউয়াছড়া বেড়াতে এসে শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়ার অনুভূতি না নিয়ে গেলে আপনার শ্রীমঙ্গল ভ্রমনের অতৃপ্তি থেকে যাবে। দিনে যতই গরম পরুক না কেন শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়ায় আপনি পৌছা মাত্রই আপনার শীত অনভিূত হবে। এ জায়গাটি পড়েছে শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ পাকা সড়কের শ্যামলী সেডের উভয় পাশে আধা কিলো পযর্ন্ত। আপনি যখন গাড়ি নিয়ে লাউয়াছড়া যাবেন তখন ঘন জঙ্গলের একটু ভিতরে প্রবেশ করলেই শুরু হবে ডিপ ফিজাপ এরিয়া । তবে পুরু লাউয়াছড়া এরিয়াই তাপ মাত্রা খুব কম। শ্যামলীর উভয় পাশে আধা কিলো এলাকায় তাপ মাত্রা খুব কম থাকে বিধায় এ অংশকে শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়া বলা হয়।


লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিশেষত্বঃ

• বাংলাদেশের একমাত্র জীবিত আফ্রিকান টিকওক গাছটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আছে।

• পৃথিবীর মাত্র চারটি দেশে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেই সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় এই উল্লুক দেখা যায়।

• লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাসিয়াপুঞ্জি, যারা ধারন করে আছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য । 


সতর্কতা

• জঙ্গল ভ্রমণে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। উজ্জ্বল রংয়ের পোশাক পরে জঙ্গল ভ্রমণে যাওয়া উচিৎ নয়। 

• বনে হৈচৈ করলে বন্যপ্রাণীদের দেখা যাবেনা। তাই সর্বোচ্চ নিরবতা পালন করতে হবে। 

• প্রশিক্ষিত গাইড সঙ্গে নিয়ে ট্রেকিং এ যাওয়া উচিত। নয়তো পথ হারানোর ভয় আছে। 

• বর্ষা মৌসুমে লাউয়াছড়া উদ্যানে জোঁকের উপদ্রব বাড়ে। এ সময় ভ্রমণে প্যান্ট মোজার মধ্যে গুজে নিন।

অবস্থান ও যাতায়াত

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণে প্রথমে যেতে হবে চায়ের শহর শ্রীমঙ্গল। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে গেলে সরাসরি লাউয়াছাড়া উদ্যানে চলে যাওয়া যায়। অন্যথায় শ্রীমঙ্গল থেকে অটো রিকশা, জীপ কিংবা গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে।[রহিম শুভ্র]

বিজ্ঞাপন - অনলি টুটুল

Like My Facebook

সর্বশেষ

মিরিঞ্জা ভ্যালি

বান্দরবান ,চট্রগ্রাম

21 Nov 2024

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সিলেট ,সিলেট

11 Jan 2024

চেয়ারম্যান ঘাট

নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম

10 Jan 2024

নলচিড়া ঘাট, হাতিয়া

নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম

09 Jan 2024

ড্রিম ওয়ার্ল্ড পার্ক

নোয়াখালী ,চট্রগ্রাম

07 Jan 2024

যোগীর ভবন

বগুড়া ,রাজশাহী

06 Jan 2024 | ভিডিও দেখুন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী ,রাজশাহী

05 Dec 2023

মা ভবানী মন্দির

বগুড়া ,রাজশাহী

04 Dec 2023 | ভিডিও দেখুন

ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক

বগুড়া ,রাজশাহী

22 Aug 2023 | ভিডিও দেখুন

বাঘা মসজিদ

রাজশাহী ,রাজশাহী

03 Jul 2023

Creating Document, Do not close this window...